গত কয়েক মাস ধরে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিস্তিনের জন্য গর্জে উঠেছিলাম। একের পর এক পোস্ট, ছবি, হ্যাশট্যাগে ভেসে গিয়েছিল ফেসবুকের টাইমলাইন। সবাই যেন তখনো হৃদয়বান ছিল, তখনো চোখে পানি জমতো, গর্জন উঠতো – “ফিলিস্তিনের পাশে আছি!”
কিন্তু আজ?
আজ ৩৫ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু, বিমান হামলায় ধ্বংস হওয়া আবাসিক ভবন, মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা শিশুর কান্না—এসব আমাদের আর স্পর্শ করে না। গাজা শহরের শুজাইয়া, খান ইউনিস, জেরিকো – একটার পর একটা অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ ফেসবুকের টাইমলাইন ঠান্ডা। চোখে পড়ে না কোনো পোস্ট, না কোনো প্রতিবাদ, না কোনো কণ্ঠস্বর।
আমরা কি শুধুই ট্রেন্ডের পেছনে ছুটে চলি? একটা বিষয় ‘ট্রেন্ডিং’ হলেই যেন সবাই সচেতন, আর ট্রেন্ডটা মিলিয়ে গেলে আমরাও যেন ভুলে যাই—মানুষ এখনো মরছে!
গত দুইদিনের কিছু ভয়াবহ বাস্তবতা:
- গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৫ জন নিহত ও ৭০+ আহত, ধ্বংস হয়েছে আটটি ঘর, এখনো নিখোঁজ ২০ জন।
- খান ইউনিস ও আল-ফুখারি এলাকায় বিমান হামলায় আরও কয়েকজন নিহত, যার মধ্যে একটি শিশু ছিল।
- জেরিকোতে সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত ৪ জন ফিলিস্তিনি।
- ৮০ জন বন্দি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল, যাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি। অথচ বিশ্ব মিডিয়ায় সেসব খবরও ঠাঁই পায় না।
এই মুহূর্তে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজি সতর্ক করেছেন—“ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদ থেকে ফিলিস্তিনি জাতিকে রক্ষা করার সময় আর খুব বেশি নেই।” অথচ এই বার্তাও কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে—আমাদের নিস্পৃহ চাহনির ভিড়ে।
আমরা কি কেবল স্ট্যাটাস দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবো? না কি মানবতার এই যুদ্ধেও দাঁড়াবো সত্যিকারের অবস্থানে?
ফিলিস্তিনের জন্য এখন দরকার ধারাবাহিক প্রতিবাদ—হোক সেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে বা বাস্তব জীবনেও। তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেছে, আমাদের কণ্ঠ যদি এখনও না জাগে, তবে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
ফিলিস্তিনে আজও মানুষ মরছে। আমরা কি এখনো মানুষ হিসেবে বেঁচে আছি?
0 Comments