Advertisement

শিরোনাম: সংখ্যায় ২ বিলিয়ন, কিন্তু হৃদয়ে কতজন?—মুসলিম উম্মাহর নিস্তব্ধতা ও আত্মসমালোচনার সময়

শিরোনাম: সংখ্যায় ২ বিলিয়ন, কিন্তু হৃদয়ে কতজন?—মুসলিম উম্মাহর নিস্তব্ধতা ও আত্মসমালোচনার সময়

সময়ঃ ০৬/০৪/ ২০২৫ইং
প্রতিবেদনেঃ মোহাম্মদ ইরফানুল হক

২ বিলিয়ন মুসলমান—তবুও ফিলিস্তিন একা!


বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২ বিলিয়নের বেশি মুসলমান বসবাস করছে। সংখ্যার দিক দিয়ে ইসলাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের গাজায় আমাদের ভাই-বোনেরা প্রতিদিন বোমার নিচে জীবন হারাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই বিশাল সংখ্যক মুসলমান জাতি কোথায়? তারা কী করছে?





মুসলিম বিশ্বের পরিসংখ্যান: এক বিশাল জনসংখ্যা

  • মোট মুসলিম জনসংখ্যা: ১.৯ বিলিয়ন (প্রায় ২৪.১% বিশ্ব জনসংখ্যা)
  • মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ: ৪৯টি
  • সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশ: পাকিস্তান (~২৪৫ মিলিয়ন), ইন্দোনেশিয়া (~২৪১ মিলিয়ন), ভারত (~১৯৫ মিলিয়ন মুসলিম)
  • প্রধান মুসলিম দেশগুলো: বাংলাদেশ, তুরস্ক, ইরান, মিশর, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, মরক্কো, সুদান, মালয়েশিয়া ইত্যাদি

অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি:

অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকেও অনেক মুসলিম দেশ শক্তিশালী। তেলের রিজার্ভ, সেনাবাহিনী, আন্তর্জাতিক প্রভাব—সব কিছুই মুসলিম উম্মাহর অনেক দেশের রয়েছে। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়—এই শক্তির ব্যবহার কোথায়?

  • মুসলিম দেশগুলো বিশ্বের তেল রপ্তানির প্রায় ৭০% নিয়ন্ত্রণ করে
  • সৌদি আরব, কাতার, ইউএই, ইরান বিশ্বে ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত
  • অনেক দেশের নিজস্ব সেনাবাহিনী, অস্ত্র কারখানা ও সামরিক প্রযুক্তি আছে

কুরআন ও হাদীস কী বলে?

ফেইসবুক থেকে নেওয়া
আল্লাহ বলেন:
“তোমরা কেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো না তাদের জন্য, যারা নিপীড়িত—পুরুষ, নারী ও শিশু—যারা বলছে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই জালিম সম্প্রদায়ের হাত থেকে রক্ষা করো।”
(সূরা আন-নিসা: ৭৫)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তুমি যদি কোনো যুলুম দেখো, তাহলে তা হাতে থামাও। যদি না পারো, তবে মুখে বলো। তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো—এটাই সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।”
(সহীহ মুসলিম)

আজ আমরা প্রায় কিছুই করছি না—না হাতে, না মুখে। আর অন্তরে ঘৃণা থাকলেও, তার কোনো প্রকাশ দেখা যায় না।


আল্লাহ বলেন: "আর যারা বিশ্বাস করে, তারা তো একে অপরের ভাই।" (সূরা হুজুরাত: ১০)

"তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো সৎকর্ম ও আল্লাহভীতি বিষয়ে, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের বিষয়ে নয়।" (সূরা মায়িদা: ২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "তোমরা যদি যুলুম দেখো, তা রোধ করো। না পারলে মুখে প্রতিবাদ করো। তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো—এটাই দুর্বলতম ঈমান।" (সহীহ মুসলিম)

"তোমরা যদি ব্যবসা, জমি ও দুনিয়ার পেছনে পড়ে যাও এবং জিহাদ ছেড়ে দাও, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ওপর অপমান চাপিয়ে দেবেন, যতক্ষণ না তোমরা দ্বীনের দিকে ফিরে আসো।" (আবু দাউদ)

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“এক সময় আসবে, যখন তোমরা সংখ্যায় প্রচুর হবে, কিন্তু তোমরা ফেনার মতো—নিস্প্রভ, মূল্যহীন।”
(আবু দাউদ)

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখন সেই অবস্থাতেই পৌঁছেছি।


আত্মসমালোচনার সময়

ফিলিস্তিনের ভাইবোনদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটা আমাদের বিবেকের ওপর প্রশ্ন তোলে। আমরা কি শুধুই সংখ্যায় বড় এক দল? নাকি সত্যিকার অর্থে রাসূল (সা.)-এর উম্মাহ হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত?

রাসূল (সা.) বলেছেন: “এক সময় আসবে, যখন তোমরা সংখ্যায় প্রচুর হবে, কিন্তু তোমরা ফেনার মতো—নিস্প্রভ, মূল্যহীন।” (আবু দাউদ)

আজ আমরা সেই অবস্থায় পৌঁছেছি—সংখ্যায় অনেক, কিন্তু কোনো প্রভাব নেই, সম্মান নেই, ঐক্য নেই।

সমস্যার মূল: বিভাজন, ভয় এবং দুনিয়াপ্রীতি

১. একতা নেই: মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ—জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক স্বার্থ—আমাদের ঐক্য ভেঙে দিয়েছে।
২. আসক্তি ও স্বার্থবাদিতা: মুসলিম নেতারা বিশ্বশক্তির মুখোমুখি হতে চান না, কারণ তারা অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ব্যক্তিগত স্বার্থকে ঈমানের ওপর স্থান দিয়েছেন।

৩. জনগণের অক্রিয়তা: সাধারণ মুসলমানরা দোয়ার বাইরে কিছু করতে চায় না, অনেকেই "আমাদের কিছু করার নেই" এই অজুহাতে নিজেকে যুলুমের অংশ করে তুলছে।

আজকের বাস্তবতা—আমরা কোন দিকটায় আছি?

১. ভ্রাতৃত্ববোধ নেই: আমরা একে অপরকে ভাই ভাবি না, বরং জাতীয়তা, বর্ণ ও রাজনৈতিক মতভেদে বিভক্ত। ২. ঐক্যহীনতা: ইসলামী ঐক্যের পরিবর্তে স্বার্থের ভিত্তিতে জোটবদ্ধ হওয়া, পারস্পরিক অবিশ্বাস ৩. নিরবতা: যুলুমের বিরুদ্ধে উচ্চারণ নেই, বরং ‘শান্তির’ নামে অন্যায়কে প্রশ্রয় ৪. সামর্থ্য থাকার পরেও উদাসীনতা: আমরা বলি “আমাদের কিছু করার নাই”—এ কথা বলে আমরাই সবচেয়ে বড় জালেমদের কাতারে দাঁড়িয়ে যাই

"আমরা কিছু করতে পারি না"—এই কথার অসত্যতা এই কথাটি একটি আত্মপ্রবঞ্চনা, একটি জুলুমের বৈধতা দেওয়ার মত। 

আমরা যদি সত্যিকার মুসলমান হই, যদি রাসূল (সা.)-এর আদর্শে ফিরি, তবে দুনিয়ার কোনো শক্তিই আমাদের ভাইদের কষ্টের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। শুধু সংখ্যা নয়, চাই ঈমান, চাই পদক্ষেপ, চাই প্রতিবাদ, চাই ঐক্য।

আজ সময় এসেছে শুধু ফিলিস্তিন নয়, পুরো উম্মাহর আত্মবিশ্লেষণের। আমাদের অব্যবস্থা, নির্লিপ্ততা, স্বার্থপরতা আজ গাজাবাসীর কফিনে আরেকটি পেরেক ঠুকে দিচ্ছে।

সংখ্যা নয়, প্রয়োজন ঈমান, সাহস ও ঐক্য।

যতদিন আমরা "কিছুই করতে পারি না" এই অজুহাতে পালিয়ে যাব, ততদিন ফিলিস্তিনের শিশুরা আমাদের বিবেকের ওপর রক্ত ছিটিয়ে যাবে।
সংখ্যা নয়, চাই ঈমান। দোয়া নয়, চাই পদক্ষেপ। শোক নয়, চাই প্রতিবাদ। নীরবতা নয়, চাই উচ্চারণ—"আমরা আছি ফিলিস্তিনের পাশে!"

Post a Comment

0 Comments