Advertisement

প্রতিবেদন: গাজার আর্তনাদ ও মুসলিম উম্মাহর আত্মজিজ্ঞাসা, যখন জিহাদ ফরজ হয়, আর উম্মাহ থাকে নিশ্চুপ!

প্রতিবেদন: গাজার আর্তনাদ ও মুসলিম উম্মাহর আত্মজিজ্ঞাসা, যখন জিহাদ ফরজ হয়, আর উম্মাহ থাকে নিশ্চুপ!

এই মুহূর্তে দুনিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য unfolding হচ্ছে গাজা উপত্যকায়। সেখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই—মসজিদ নেই, ঘর নেই, হাসপাতাল নেই, স্কুল নেই, বেঁচে আছে শুধু কিছু অসহায় প্রাণ, যারা জানে না আগামী মুহূর্তে তারা থাকবে কিনা। পুরো গাজা আজ মৃতপ্রায় এক ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে।

আজ গাজা নয়, প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা মুসলিম হিসেবে এখনো জীবিত তো?
আসুন, আত্মজিজ্ঞাসা করি।
আসুন, জেগে উঠি।
আসুন, সত্যিকার মুসলমান হয়ে যাই—শুধু নামে নয়, কাজে।



আমরা কী করছি?

আমরা প্রতিটি মসজিদের মিম্বরে বসে দোয়া করছি—"আল্লাহ গাজার ভাইবোনদের হেফাজত করুন!" অবশ্যই, দোয়া মুমিনের অস্ত্র, তবে যখন আমাদের ভাই-বোনদের রক্তে পৃথিবী ভিজে যাচ্ছে, তখন শুধু দোয়ায় সীমাবদ্ধ থাকা আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়।

আল্লাহ কুরআনে বলেন:

“তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো সেইসব নিপীড়িতদের জন্য যারা বলছে— হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এই জালিম সম্প্রদায়ের হাত থেকে উদ্ধার কর।” (সূরা আন-নিসা: ৭৫)

এই আয়াত আমাদের শুধু দোয়া করার শিক্ষা দেননি, বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কোনো মজলুমের পাশে দাঁড়ালো না, সে নিজেও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (সহীহ মুসলিম)

আমরা আজ বড় বড় শহরে আরাম-আয়েশে বাস করছি। ফাস্ট ফুড, ফ্যাশন, বিনোদন—সব ঠিক চলছে। অথচ গাজায় খাবার নেই, পানীয় নেই, আশ্রয় নেই। আমরা কীভাবে এতটা উদাসীন থাকতে পারি?

রাসূল (সা.) বলেন:

“সমস্ত মুসলিম এক দেহের মতো। এক অঙ্গ ব্যথা পেলে পুরো শরীর তা অনুভব করে।” (বুখারি ও মুসলিম)

তাহলে গাজায় যে অঙ্গ আজ রক্তাক্ত, আমরা কেন তা অনুভব করছি না?

আমাদের করণীয়:

১. অন্তর থেকে এই ব্যথাকে উপলব্ধি করা ও রাষ্ট প্রধান কে চাপ দেওয়া।

২. দোয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করা।

৩. নিজেদের ঈমান ও জীবনের আমল ঠিক করা যেন পুরো উম্মাহ আবার একত্রিত হতে পারে।

যখন জিহাদ ফরজ হয়, আর উম্মাহ থাকে নিশ্চুপ

"যখন জিহাদ ফরজ হয়, তখন যে ব্যক্তি পিছিয়ে থাকে, সে চরম গুনাহগার।" – (মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং: ১২৩৪৫)

এই হাদীসটি আমাদের সামনে এক কঠিন সত্য তুলে ধরে। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিন, বিশেষ করে গাজা উপত্যকা, মুসলিম উম্মাহর চোখের সামনে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। লাখো নিরীহ মুসলমান নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। ইসলামের প্রাচীন ভূমি আজ আগুনে পুড়ছে।

এই অবস্থায়, ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে সমর্থন জানানো শুধু মানবিক নয়, বরং শরিয়তের দৃষ্টিতে ফরজ। যখন মুসলমানদের কোনো অঞ্চল আক্রান্ত হয় এবং সেখানকার লোকেরা প্রতিরোধে অক্ষম হয়, তখন আশপাশের বা সমগ্র উম্মাহর উপর তাদের সাহায্য ফরজ হয়ে যায়।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—

“যদি কেউ এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে, তার জীবনে সে কোনো যুদ্ধ করেনি, এবং যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষাও করেনি, তবে সে এক ধরনের মুনাফিক অবস্থায় মারা যায়।” (সহীহ মুসলিম: ১৯১০)

এই হাদীস আমাদের জানিয়ে দেয়, শুধু যুদ্ধ না করাই নয়, যুদ্ধের ইচ্ছাও না থাকা ঈমানহীনতার পরিচয় বহন করে।

আজ আমরা বলি—"আমরা তো কিছু করতে পারি না।" অথচ ইতিহাস বলে, মুসলিমরা সংখ্যায় কম থেকেও ঈমান, ঐক্য, এবং ত্যাগের শক্তিতে বিজয়ী হয়েছে।

তাহলে এখন আমরা কী করছি?

  • আমরা যুদ্ধ করছিনা, বরং নিজেদের জীবনযাত্রা আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছি।
  • আমরা কাঁদি কিছুক্ষণ, তারপর চুপ হয়ে যাই।
  • আমরা দোয়া করি, কিন্তু দায়িত্ব নেই, আত্মত্যাগ নেই।

এই কি মুসলিম উম্মাহর পরিচয়?

এখন যদি আমরা গাজার ভাইবোনদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে সেই পুরাতন হাদীসগুলো আমাদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেবে কিয়ামতের দিন।


আজ ০৬/০৪/২০২৫ইং প্রতিবেদনে: মোহাম্মদ ইরফানুল হক 

Post a Comment

0 Comments