Advertisement

Bata ki Israeli company বাটা কোম্পানির সত্য ইতিহাস: একজন বিদেশি বীর যোদ্ধার গল্প যাকে আমরা ভুলে গেছি

    বাটা কোম্পানির সত্য ইতিহাস: একজন বিদেশি বীর যোদ্ধার গল্প যাকে আমরা ভুলে গেছি

বাটা কি ইসরায়েলি কোম্পানি? সৃত্যিই কি এর মালিক ইহুদি?

সম্প্রতি অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন:
"বাটা কি ইসরায়েলি কোম্পানি?"
"বাটা পণ্য বয়কট করা উচিত কি?"
এই প্রশ্নের পেছনে আছে কিছু ভুল ধারণা, এবং চাপা পড়ে থাকা এক সত্য ইতিহাস।



প্রথমেই স্পষ্ট করা যাক:

বাটা ইসরায়েলি কোম্পানি নয়, এবং এর মালিকানায় কোনো ইহুদি সংশ্লিষ্টতা নেই।
তাহলে প্রশ্ন থাকে—কেন এই কোম্পানিকে বয়কটের আওতায় আনা হচ্ছে?

এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে, যেখানে বাটা কোম্পানির একজন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছিলেন এক বীর যোদ্ধা।


উইলিয়াম এ এস ঔডারল্যান্ড: বাটার ছায়ায় থাকা একজন বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭০ সালে একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক উইলিয়াম এ এস ঔডারল্যান্ড ঢাকায় আসেন বাটা সু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে।
পরবর্তীতে তিনি হন বাটা কোম্পানির টঙ্গী কারখানার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” নামে গণহত্যা চালায়,
ঔডারল্যান্ড সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে গোপনে পাঠান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে
এর মাধ্যমে বিশ্ব জানতে পারে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রকৃত চিত্র।

বাটা কোম্পানির অফিসার থেকে হয়ে ওঠেন গেরিলা কমান্ডার

উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড শুধু ছবি তুলেই থেমে যাননি।
বাটার শ্রমিকদের নিয়ে গঠন করেন একটি গোপন গেরিলা বাহিনী, যাদের তিনি নিজ হাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন।

এই বাহিনী টঙ্গী, ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন, কালভার্ট, সেতু ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এই সাহসিকতা আসে তার অতীত থেকে—ঔডারল্যান্ড ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক অভিজ্ঞ সৈনিক।

তিনি একইসাথে পাকিস্তানি জেনারেলদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন
এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদান করতেন কর্নেল ওসমানীদের সঙ্গে।

বীর প্রতীক পদক পাওয়া একমাত্র বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সরকার উইলিয়াম এ এস ঔডারল্যান্ডকে “বীর প্রতীক” খেতাব প্রদান করে
এটি বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক পদক যা মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য দেওয়া হয়।
তিনি একমাত্র বিদেশি, যিনি এই পদক লাভ করেন।

এটি কেবল একটি সম্মানসূচক সনদ নয়—এটি ইতিহাসের স্বীকৃতি।


বাটা কোম্পানির ইতিহাসকে ভুলে আমরা কী করছি?

১৯৭৮ সাল পর্যন্ত উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড বাংলাদেশেই ছিলেন।
এরপর অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান এবং ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আজ যখন বাটা কোম্পানির দোকানে হামলা ও লুটপাটের খবর আসে, তখন প্রশ্ন ওঠে—
এই মানুষটির স্মৃতি কি আমরা ভুলে গেছি?
আমরা কি জানি বাটা কোম্পানির ইতিহাসে এক বিদেশি মুক্তিযোদ্ধার রক্তমাখা ভূমিকা ছিল?


ইতিহাস জানুন, আগুনে পুড়ানোর আগে

"উইলিয়াম ঔডারল্যান্ড ছিলেন একজন বাটার কর্মকর্তা, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার ছায়াযোদ্ধা।
বাটা ছিল তাঁর ছদ্মবেশ, মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাঁর পরিচয়।"

আজ যখন কেউ বলেন “বাটা ইসরায়েলি কোম্পানি, তাই বয়কট করবো”—
তখন জিজ্ঞাসা করুন, আপনি আসলে কাকে শাস্তি দিচ্ছেন?

আপনি কি একটা কোম্পানিকে ঘৃণা করছেন, নাকি ইতিহাসের এক মহান বীরকে মুছে দিচ্ছেন?


তথ্যসূত্র:

  • মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
  • William Ouderland Memorial Trust
  • The Daily Star Archives
  • Wikipedia


Post a Comment

0 Comments