আমরা যখন জুলুমের বিরুদ্ধে মুখ খুলি,
ফিলিস্তিনের মাটিতে রক্ত দেখে বুক ফেটে যায়,
একটু দাঁড়াতে চাই নির্যাতিত মানুষের পাশে—
তখন কিছু লোক বলেই ফেলে:
আজকাল দেখা যায় কেউ জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়:
"উহু… নামাজ পড়ো? না পড়লে যুদ্ধ করতে পারবে না!"
কিন্তু ইসলাম কি আসলেই এমন কোনো নিয়ম করেছে? রাসূল (সা.) কি এমন কাউকে যুদ্ধ থেকে বাদ দিয়েছেন?
চলুন কুরআন, হাদীস ও আলেমদের ব্যাখ্যায় বুঝে নিই:
পর্ব ১: নামাজের গুরুত্ব—রাসূলুল্লাহ (সা.) কী বলেছেন?
১. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত: ... (তার মধ্যে অন্যতম) নামাজ প্রতিষ্ঠা করা...”
— (সহিহ বুখারী, হাদীস: ৮)
২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“মানুষ ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ।”
— (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৮২)
৩. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“প্রথম যে আমলের হিসাব কিয়ামতের দিন নেওয়া হবে তা হলো সালাত। যদি তা ঠিক থাকে, তাহলে তার সব কাজ ঠিক হবে। আর যদি তা নষ্ট হয়ে যায়, তবে অন্য কাজও নষ্ট হয়ে যাবে।”
— (তিরমিযী, হাদীস: ২৬১৬; হাসান সহীহ)
নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটি ফরজ, এটি মৌলিক পরিচয়। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
পর্ব ২: তাহলে কি নামাজ না পড়লে যুদ্ধ করা যাবে না?
কুরআন ও হাদীস কী বলছে?
নামাজ ও জিহাদ—উভয়ই ফরজ, কিন্তু একে অপরের পূর্বশর্ত নয়।
নামাজের বিধান:
"নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ করা হয়েছে।"
— (সূরা নিসা ৪:১০৩)
জিহাদের বিধান:
"তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হলো, যদিও তা তোমাদের অপছন্দনীয়..."
— (সূরা বাকারা ২:২১৬)
কোথাও বলা হয়নি যে নামাজ না পড়লে জিহাদ করা নিষিদ্ধ।
মুনাফিকদের ভূমিকা রাসূল (সা.)-এর যুগে:
- তাবুকের যুদ্ধে অনেক মুনাফিক অংশ নিয়েছিল।
- আল্লাহ বলেছেন:
"তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়..."
— (সূরা নিসা ৪:১৪২)
তবুও রাসূল (সা.) তাদের যুদ্ধ থেকে বাদ দেননি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"যতক্ষণ পর্যন্ত তারা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে, ততক্ষণ তাদের অন্তর বিদীর্ণ করে দেখো না।"
— (সহিহ মুসলিম: ৯৫)
অর্থাৎ—কারো ঈমান আছে কি নেই, যুদ্ধ করতে পারবে কি না—সেই ফয়সালা কারও একার হাতে না। ইসলাম কাউকে gatekeeper বানায়নি।
পর্ব ৩: তাহলে নামাজ না পড়লে ঈমান থাকে নাকি চলে যায়?
এখানে আলেমদের মধ্যে দুটি মত রয়েছে:
মত ১: নামাজ না পড়লে ঈমান চলে যায় (কুফরি হয়ে যায়)
-
এই মতের আলেম: ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল, ইবনে বায, শাইখ উসাইমিন প্রমুখ।
-
দলিল: “আমাদের ও তাদের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ; যে তা ছেড়ে দিল, সে কুফরি করলো।”
— (তিরমিযী) -
উমর (রা.) বলেন:
“যে নামাজ ছেড়ে দেয়, তার ইসলামে কোনো অংশ নেই।”
মত ২: নামাজ না পড়লেও ঈমান থাকে, তবে গুনাহগার
-
এই মতের আলেম: ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম মালিক, ইমাম নববী, ইবনে হাজার প্রমুখ।
-
ব্যাখ্যা: এখানে ‘কুফরি’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘কুফরুন আসগার’—অর্থাৎ বড় গোনাহ, কিন্তু ইসলাম থেকে বের করে দেয় না।
-
প্রমাণ:
মুনাফিকরা নামাজে গাফিল ছিল, তবুও রাসূল (সা.) তাদের জানাজা পড়িয়েছেন। তারা মুসলিম বলেই গণ্য হয়েছেন।
নামাজ না পড়া অত্যন্ত বড় গোনাহ।
তবে কেউ যদি ঈমান রাখে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সে ইসলামের বাইরে নয়। তার ভুল শুধরাতে হবে, তাকে ছোট করতে নয়।
শেষ কথা:
নামাজ ছাড়া মুসলিম জীবন অসম্পূর্ণ—এটা ঠিক।
কিন্তু কারও নামাজ না পড়াকে অজুহাত বানিয়ে, তাকে জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো থেকে বিরত রাখা, তাকে যুদ্ধ থেকে বাদ দেওয়া—এটা ইসলাম নয়, এটা অহংকার।
"যে নামাজ তোমাকে বিনয় শেখায় না, অন্য মুসলিমকে হেয় করতে শেখায়—সে নামাজ নয়, তা শুধরে নিতে হয়।"
#Palestine #Justice #Namaz #Islam #StandForTruth #gaza
0 Comments