পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যেগুলো গোটা মানবজাতির নৈতিক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা তেমনি এক পরীক্ষা। এ শুধু একটি ভূখণ্ডের ওপর বোমা বর্ষণের ঘটনা নয়; এটি পুরো মানবতার বিবেক, মুসলিম উম্মাহর আত্মা, আর সভ্যতার মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার ভয়াবহ চিত্র।
আজ যারা বেঁচে আছি, আমরা কী রেখে যাচ্ছি ভবিষ্যতের জন্য?
একটি ভগ্ন বিবেক, রক্তে রঞ্জিত ইতিহাস, আর অপারগতার অজুহাত?
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়ে
ফিলিস্তিনে গণহত্যা—চলমান এক লজ্জার অধ্যায়
লের বর্বর হামলায় গাজা উপত্যকা আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী:
- মৃত্যু সংখ্যা: ৩৪,০০০+ মানুষ শহীদ হয়েছেন
- তাদের মধ্যে ৭০% নারী ও শিশু
- আহত: ৭৫,০০০+
- বাসগৃহহীন: ১.৯ মিলিয়নের বেশি
- ধ্বংস হয়েছে: হাসপাতাল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ, গির্জা—সব কিছু
তবুও বিশ্ব নীরব।
জাতিসংঘ বিবৃতি দেয়, ওআইসি "উদ্বেগ" প্রকাশ করে, আরব লীগ "জরুরি সভা" করে ঘুমিয়ে পড়ে।
মুসলিম উম্মাহ—সংখ্যায় ২ বিলিয়ন, তবুও নিশ্চুপ!
- মুসলিম জনসংখ্যা: প্রায় ২ বিলিয়ন
- মুসলিম রাষ্ট্র: ৫০টির বেশি
- বিশ্ব তেল রপ্তানির ৭০% মুসলিম দেশগুলোর হাতে
- প্রচুর সেনা, অস্ত্র, সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এক শিশু, এক মা, এক বৃদ্ধ বাবাকেও রক্ষা করতে পারছে না।
প্রশ্ন উঠে—তবে তারা করছেটা কী?
- তারা কি অক্ষম?
- তারা কি নিরস্ত্র?
- তারা কি প্রতিবন্ধী?
- তারা কি বধির, কানা, বোবা?
- তাদের কি কোনও ঈমান নেই?
- না কি তারা নিজেরাই লোভ ও ভয়ের দাস হয়ে গেছে?
আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা কোথায় গেল?
কুরআন বলে:
"তোমরা কেন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে না সেই দুর্বল নারী, শিশু ও নিপীড়িতদের জন্য যারা আহাজারি করে বলছে, 'হে আমাদের প্রভু! আমাদের এই যালিম জনগোষ্ঠী থেকে মুক্ত করো'?"
—সূরা আন-নিসা: ৭৫
রাসূল (সা.) বলেন:
"তুমি যদি যুলুম দেখো, তা হাতে থামাও; না পারলে মুখে প্রতিবাদ করো; তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো—এটাই দুর্বলতম ঈমান."
—সহীহ মুসলিম
আজ আমরা কী করছি?
- হাতে থামাচ্ছি না
- মুখে প্রতিবাদ নেই
- অন্তরও যেন পাথর হয়ে গেছে
সভ্যতার মুখোশ ছিঁড়ে গেছে
এই আধুনিক যুগে, যারা "মানবাধিকার", "সভ্যতা", "মানবতা" বলে সভা-সেমিনার করে—
তারা আজ কোথায়?
তারা কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বরং তারা অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলকে সাহায্য করছে।
নীরবতা দিয়ে বর্বরতাকে বৈধতা দিচ্ছে।
সভ্যতার আড়ালে তারা সবচেয়ে হিংস্র, লজ্জাজনক আচরণে লিপ্ত।
এই সভ্যতাই একদিন ধ্বংস হবে তার নিজের ভণ্ডামির ভারে।
ভবিষ্যতের ইতিহাস—আরও নির্মম হবে
আজ হতে শতবর্ষ পরে,
যখন ভবিষ্যতের প্রজন্ম গাজার ইতিহাস পড়বে—
তারা বিস্ময়ে ভাববে:
“এই সময়কার মানুষরা কীভাবে এমন হত্যাযজ্ঞ ঘটতে দিল?”
“এত মুসলিম, এত রাষ্ট্র, এত সেনাবাহিনী—তারা কী করছিল?”
“তারা কি অন্ধ ছিল? না কি নির্লজ্জ?”
এ প্রশ্নের উত্তর আমরা দিতে পারব না।
তবে ইতিহাস আমাদের মুখ চেপে ধরবে।
আমরা কী রেখে যাচ্ছি?
- আমরা রেখে যাচ্ছি ধ্বংসস্তূপে ঢাকা এক মানবতা
- আমরা রেখে যাচ্ছি নির্বাক উম্মাহর লজ্জার কাহিনী
- আমরা রেখে যাচ্ছি ঈমানহীন জীবনের ইতিহাস
যদি আজ জেগে না উঠি—
তবে শুধু গাজা নয়, একদিন আমাদের ঘরেও আগুন লাগবে।
আর তখন কেউ থাকবে না ডেকে বলার মতো—
"আমি আছি তোমার পাশে।"
আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া—মৃত্যুর আগে যেন এই যুলুমের পতন দেখতে পাই।
আর ইতিহাসে যেন অন্তত একটি বাক্য লেখা থাকে—
“একটি প্রজন্ম ছিল, যারা অন্তত চেষ্টাটা করেছিল।”
0 Comments